اَلۡحَمْدُ لِلّٰهِ وَكَفٰى وَسَلَامٌ عَلٰى عِبَادِهِ الَّذِيْنَ اصْطَفٰى أَمَّا بَعْدُ
فَأَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطٰنِ الرَّجِيْمِ ۞ بَسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ۞
﴿وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ ۞﴾ [ الروم : ۲۱ ]
* سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُونَ ۞ وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِينَ ۞ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ۞
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّبَارِكْ وَسَلِّمْ
একজন স্ত্রী কিভাবে আদর্শ স্ত্রী হতে পারে?
দম্পতি জীবন সুন্দর করার জন্য ইসলাম ধর্মে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে। নবীজী সা. -এর হাদিসের একটি বড় সংগ্রহ দাম্পত্য জীবন সম্পর্কিত। এই শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হল, স্বামী-স্ত্রীর জীবন যেন শান্তির ও সুখের হয়। তারা যাতে দুনিয়ার জীবনে এবং পরকালের জীবনে সফল হতে পারে।
স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে বিশ্বে অনেক গবেষণা হয়েছে। আপনি যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকালে দেখতে পাবেন, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক কীভাবে উন্নত করা যায় এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন শীর্ষস্থানীয় মনোবিজ্ঞানী এবং পিএইচডি চিকিৎসকগণ। আমিও আমার পুরো জীবন গবেষণা করে কাটিয়েছি।
আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেন–
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
আর একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
(সূরাঃ আর-রূম, আয়াতঃ ২১)
অর্থাৎ কোরআনের ভাষায় বিয়ের মূল উদ্দেশ্য হল, স্বামী স্ত্রীর মাধ্যমে শান্তি পাবে আর স্ত্রী স্বামীর মাধ্যমে শান্তি পাবে। আল্লাহ্ তায়ালা আরো বললেন, এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এটা মহান আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ যে, তিনি মানুষের জীবন উন্নয়ন সহজ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা গৃহস্থালি কাজের জন্য নারীদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তাদের স্বভাবে কোমলতা দান করেছেন। গৃহস্থালি যাবতীয় কাজ করার জন্য সুন্দর কোমল হৃদয়ের প্রয়োজন। যেটা আল্লাহ তায়ালা নারীদেরকে দিয়েছেন।
আর পুরুষকে সৃষ্টি করেছেন বাহিরের কাজ আঞ্জাম দেওয়ার জন্য। বহিরাগত কাজের দায়িত্ব পুরুষকে দিয়েছেন।
এবং স্বামীকে বানিয়েছেন ঘরের অভিভাবক।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ
পুরুষরাই নারীর অভিভাবক। (আন-নিসা, আয়াতঃ ৩৪)
পুরুষকে অভিভাবক বানানোর মৌলিক কিছু কারণ রয়েছে।
১. সুরক্ষা।
একজন মহিলাকে সুরক্ষা দেন তার স্বামী। একজন নারী দুর্বল। তাকে তার জীবন রক্ষা করতে হবে, তার সম্পত্তি রক্ষা করতে হবে, মান ও মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। এসব কাছের জন্য তার একজন পুরুষের সাহায্যের প্রয়োজন। তাই আল্লাহ তায়ালা পুরুষকে অভিভাবক বানিয়েছেন। ঘরের সমস্ত কাজের জিম্মাদার পুরুষ। পুরুষ যে ফায়সালা দিবে তাতে বরকত হবে। কারণ, সে ঘরের আমীর। আর আমীরের সিদ্ধান্তে বরকত রয়েছে। স্বামীর চেয়ে স্ত্রী বেশি বুদ্ধিমতী হতে পারে। কিন্তু বরকত পুরুষের ফায়সালার মধ্যেই। তাই বিজ্ঞ মহিলাগণ তাদের স্বামীর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যাতে এতে মধ্যে বরকত হয়।
২. নারীদের আবেগ বেশি
নারীরা বুদ্ধিমতী হতে পারে কিন্তু তাদের আবেগ বেশি। সে আবেগতাড়িত হয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। আবার তারা আবেগী না হলেও স্বামীকে ভালবাসা দিতে পারত না। সন্তানদের ভালবাসতে সক্ষম হতো না। তাদের মধ্যে আবেগের দিকটা প্রাধান্য থাকে। তাই সন্তানের জন্মের পর সন্তানের জন্য তার দিন-রাত এক হয়ে যায়। পানাহার ভুলে যায়। ঘুমের চিন্তা করে না। সে তার সন্তানের জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। সন্তানের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দেয়। কারণ, তার হৃদয়ে সন্তানের প্রতি ভালোবাসা রয়েছে।
তার মধ্যে যদি আবেগের দিক প্রবল না হতো তাহলে সন্তান জন্মের পর সে তার স্বামীকে বলত, তোমার সন্তান হয়েছে, এখন সন্তানের দায়িত্ব কাউকে দিয়ে দাও। কিন্তু আল্লাহ সহজ করে দিয়েছেন। মায়ের অন্তরে সন্তানের ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছেন। তাই সে ২৪ঘন্টা জন্য সন্তানের সেবক হয়ে যায়।
💖 ভালো পুরুষ হওয়ার মাপকাঠি
আম্মাজান হযরত আয়শা রাযি. বলেন, নবীজী সা. বলেছেন,
خيرُكم خيرُكم لأَهلِه وأناخيرُكُم لأَهلي
তোমাদের মধ্যে উত্তম সে যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে উত্তম।
অর্থাৎ একজন মানুষ সে কতটা ভালো তা নির্ণয় করা হবে সে তার পরিবারের সাথে কতটা ভালো। তার কর্মক্ষেত্র বা বন্ধু মহল নয়। বরং সে তার পরিবারের সাথে কতটা ভালো আচার-ব্যবহার করে থাকে? যে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে ভালোবাসার আচরণ করে। সন্তানদের ভালোভাবে দেখাশোনা করে। তাদের সাহায্য করে। তাদের প্রয়োজন পুরা করে। ঘরবাসীদের জন্য রহমত হয়। তিনি একজন ভালো স্বামী।
একজন মানুষ জীবনে যত অর্থ ব্যয় করে, তার প্রতিদান সে পায়। যেমন– গরীবকে দান করে সওয়াব পায়। মসজিদ নির্মাণ করে তার সওয়াব পায়। কিন্তু শরিয়ত বলে, যে অর্থ নিজের পরিবারের জন্য ব্যয় করা হয় তা হল, উত্তম সাদকা।
ঘরের দেখাশোনা করা পুরুষের কর্তব্য। স্ত্রীর প্রয়োজন অনুভব করা। তার কাজে সহযোগিতা করা।
কিন্তু গৃহ মূলত গৃহিণীর। কারণ ঘর নারীর অবদানে আবাদ হয় আবার নারীর কারণেই ধ্বংস হয়।
আমার আম্মাজান বলতেন, কোন পুরুষ যদি কুদাল দিয়ে তার ঘর ধ্বংস করতে চায়, তবে সে তেমন কিছু করতে পারে না। একজন নারী যদি সুই দিয়ে তার ঘর ধ্বংস করতে চায়, সে দ্রুত তা করতে পারে।
তখন আমি খুব ছোট ছিলাম। তাই অবাক হয়ে জানতে চাইতাম, আম্মু এটা কী করে সম্ভব যে, একজন নারী সুই দিয়ে ঘর ধ্বংস করে দিতে পারে যা একজন পুরুষ কুদাল দিয়েও পারে না? তিনি বলতেন, বাবা! তুমি ছোট তাই এখন বুঝতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবতা এমনই। নারীদের এটি মহান দায়িত্ব যে, সে তার ঘর আবাদ রাখবে। এর জন্য সর্বোত্তম পদ্ধতি হল, একে অপরের সাথে মুহব্বত ভালবাসা নিয়ে থাকা।
💖 স্বামী-স্ত্রীর সুখের রহস্য
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
অর্থাৎ আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিণীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকতে পারো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (আর-রূম, আয়াতঃ ২১)
যদি একটি দম্পতি দয়া এবং ভালোবাসার সাথে জীবনযাপন করে, তবে তারা সুখী জীবনযাপন করছে। ভরণপোষণ কম-বেশি পাওয়া ভিন্ন বিষয়। স্বামী-স্ত্রী খাওয়ার জন্য রুটি রুজির ব্যবস্থা না থাকলেও তাদের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা থাকলে তারা খুব সুখী জীবন যাপন করে। আর দুজনের মধ্যে যদি প্রেম-ভালোবাসা না থাকে তাহলে জীবনটাই যেন একটা যন্ত্রণা।
💖 সেরা স্ত্রী হওয়ার জন্য ৬টি টিপস
বৈজ্ঞানিক যুগে এ বিষয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। যেগুলো সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি নারীকে বিষয়গুলো স্মরণ রেখে সে অনুযায়ী জীবন অতিবাহিত করা উচিত।
১. Communication
স্বামীকে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝানো এবং সেটা স্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা।
নারীদের মধ্যে একটা প্রবণতা রয়েছে, তারা সরাসরি বলে না, আকার ইঙ্গিতে স্বামীকে বোঝানোর চেষ্টা। এটা তাদের অভ্যাস, তারা সরাসরি কথা বলে না, ইঙ্গিতে বলে। তারপর ভাবে, স্বামী বুঝে নিবেন। অথচ স্পষ্ট কথা বলাই তার জন্য ভালো ছিল। কিন্তু স্পষ্ট করে কথা না বলে সে ইঙ্গিতে বলে এবং ভাবে, স্বামী স্বয়ংক্রিয়ভাবে বুঝে নেবেন। সমঝদার স্বামীরা তো বুঝেন এবং ব্যাখ্যা করে নিতে পারেন।
কিন্তু যারা তার ইঙ্গিত বুঝতে সক্ষম নয়। তাদের সাথে এ নিয়ে তর্ক হয়। তাই সবচেয়ে ভালো হবে, আপনার স্বামীর সামনে আবেগের সাথে অনুভূতিগুলোকে খুব সদয় এবং কার্যকরভাবে প্রকাশ করুন যাতে স্বামী বুঝতে পারেন আপনার সমস্যা কী? আপনি আসলে কী বুঝাতে চাচ্ছেন?
২. Positive tone
একটি ইতিবাচক টোন থাকা চাই। যখনই একজন স্ত্রী কথা বলবে, ইতিবাচক সুরে কথা বলবে। স্বামী যা করেছে তার জন্য তাকে দোষারোপ করবে না। আমরা মহিলাদের মধ্যে এই দুর্বলতা দেখেছি সামান্য হেরফের হলেই শুরু করে, যেদিন তার বিয়ে হয়েছিল সেদিন থেকে। তোমার মা প্রথম দিন আমার সাথে এই আচরণ করেছিল। তোমার বোন এটা করেছে। তুমি তখন কিছু বলো নি, নীরব ছিলে। অর্থাৎ গর্তে রাখা মৃতকে উপড়াতে শুরু করে। এটি একটি সংসার ধ্বংসের কারণ হতে পারে। ইতিবাচক টোন থাকা উচিত। সবকিছুতেই স্বামীকে দোষারোপ করা উচিত নয়। মানুষের মধ্যে ভুলত্রুটি আছে, দুর্বলতা আছে। তার মানে এই নয় যে, তার সব কিছুই খারাপ হবে।
৩. Admit when hurt
মনে কোনো আঘাত পেলে স্পষ্ট ভাষায় তা প্রকাশ করুন। Stop reading your husband's mind. স্বামীর মন পড়া বন্ধ করুন। এ ভুলটা ১০০ জন নারীর মধ্যে ৯৯ জনই করে থাকে। তারা স্বামীর মন পড়তে চেষ্টা করে এবং ভুল করে।
৪. Talk to your husband not about your husband
Talk to your husband not about your husband
"স্বামীর সাথে কথা বলুন, স্বামী সম্পর্কে নয়।"
তারা স্বামী সম্পর্কে স্বামীর সাথে কথা বলে না। তারা স্বামী সম্পর্কে সবার সাথে বলে বেড়ায়। বোনের সাথে বলে। মায়ের সাথে বলে। প্রতিবেশীর সাথে বলে। বাড়িতে কোনো মহিলা আসলে তাদের সাথে বলে। স্বামী সম্পর্কে সে সবার সাথে কথা বলবে। কিন্তু স্বামীর সাথে বলবে না। স্বামীর সাথে কমিউনিকেশন যত বেশি হবে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক তত মজবুত হবে।
৫. Choose your battles
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হতে পারে, সেটা যেন নীতিগত হয়। ছোট ছোট বিষয়ে মতানৈক্য সৃষ্টি করে ঝগড়া বাঁধানো উচিত নয়। কোনো ব্যাপারে বিপরীত অবস্থান নিতে হলে সেটা যেন দৃঢ় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়। তাই
Take stand on principles. "নীতিগত বিষয়ে অবস্থান নিন।"
Give up control to take more power.
"ক্ষমতা অর্জন করতে বাড়ির নিয়ন্ত্রণ স্বামীর হাতে তুলে দিন।"
যাতে আপনার ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়।
Don't be hurdle in husband's way.
"প্রতিটি কাজে স্বামীর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।"
স্বামী কোনো কিছু করতে চাইলে সরাসরি তার সামনে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়াবে না। সমালোচনা বর্জন করুন। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে শুধু শুধু ঝগড়া বাঁধানো উচিৎ নয়।
৬. Respect him "স্বামীকে শ্রদ্ধা করুন।"
অনেক নারীই তাদের স্বামীর সাথে এমন আচরণ করে যেন সে বড় সন্তান। এটা ভুল। স্বামী স্বামীই। তাকে সম্মান করতে হবে।
do not, Be loyal to him and show that you are loyal
তার প্রতি অনুগত থাকুন। তাকে বুঝান, আপনি তার অনুগত।
treat him like a child.
তার সাথে একটি শিশুর মতো আচরণ করুন।
She should try to win the Husband heart of her husband
"স্বামীর মন জয় করার চেষ্টা করুন।"
স্বামীর হৃদয়ে আপনার ভালোবাসা তৈরি করুন। গঠনমূলক চিন্তা করুন। স্বামীকে যদি কোন বিষয় বলতেই হয় তাহলে আগে তার ভালো দিকগুলো সামনে আনুন, তারপর তার ভুলগুলো তুলে ধরুন। কিন্তু যেটা হয়, যখন তার বিরুদ্ধে বলতে শুরু করে তখন এমন সুরে কথা বলে যেন তার মধ্যে ভালো বলতে কিছু নেই। জগতের সব খারাবী যেন তার মধ্যে এসে ভর করেছে।
☆ নবীজী সা.-এর বুঝানোর ধরণ
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.কে বুঝাতে চাইলেন, তাহাজ্জুদের নামাজের ব্যাপারে। সরাসরি বলে নি তুমি তাহাজ্জুদের নামাজ পড়। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. তিনি তখন যুবক ছিলেন। যুবকদের ঘুম একটু গভীর হয়। আগে আগে ঘুম থেকে উঠা বেশ কষ্টকর। তাই নবীজি সা. তাকে বললেন,
نِعْمَ الرَّجلُ عبدُ اللَّهِ لَو كانَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ
আবদুল্লাহ কত ভালো মানুষ, যদি তাহাজ্জুদের নামায পড়ত!
প্রথমে প্রশংসা করলেন। তারপর বললেন উন্নতির জন্য তাকে কী করতে হবে। সর্বোত্তম নিয়ম হল, প্রথমে কৃতিত্বগুলি স্বীকার করা। তারপরে ভুলগুলো উল্লেখ করা।
নবীজী সা. বলেছেন,
لو كنت آمِرًا أحدًا أن يسجد لأحد لأمرت المرأة أن تسجد لزوجها
আমি যদি কাউকে সিজদা করার আদেশ করতাম তাহলে স্ত্রীদেরকে নির্দেশ দিতাম তাদের স্বামীদের সামনে সিজদা করতে।
এতেই অনুমান করা যায় যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে স্বামীর কতটা সম্মান রয়েছে! বড়ই ভাগ্যবতী সেই নারীরা যারা তাদের স্বামীকে সম্মান করে। যে নারী স্বামীকে সম্মান করে সে তার রবের প্রিয় বান্দী হয়ে যায়।
☆ নবী যুগের এক আনুগত্যশীল স্ত্রী
এক সাহাবী বিয়ে করলেন। তারা একটি দোতলা বাড়ির ২য় তলা থাকতেন। স্ত্রীর বাবা-মা থাকতেন নীচ তলায়। একবার তার স্বামীর ব্যবসার জন্য সফরে বের হওয়ার প্রয়োজন হল। স্বামী নিশ্চিত ছিলেন যে, বাড়ির ভিতরে স্ত্রীর প্রয়োজনীয় সব কিছু রয়েছে। সফরে বের হওয়ার সময় স্ত্রীকে বললেন, দেখো! তুমি কিন্তু উপর তলা থেকে নামবে না। স্ত্রী বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। স্বামী চলে গেলেন। স্ত্রী উপর তলায় থাকছে। আল্লাহর ইচ্ছা একদিন তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এটা এমন এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক যে, যে কারো মন চায় এ অবস্থায় বাবার কাছে আসতে। তার সেবা করতে। কিন্তু সেই সাহাবিয়া স্ত্রী নীচে নামলেন না। বরং তিনি নবীজি সা.-এর খেদমতে সংবাদ পাঠালেন, হে আল্লাহর হাবীব! আমার স্বামী যখন সফরে যাচ্ছিলেন তখন তিনি স্পষ্ট ভাষায় আমাকে বলেছিলেন, তুমি নীচে নামবে না। কিন্তু এখন একটি নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমি কি তার সেবা করার জন্য নীচে নামতে পারি? নবীজি সা. বললেন, না! তোমার স্বামী তোমাকে যা করতে বলেছেন তাই করো। সাহাবিয়া নীচে নামলেন না। এদিকে তার বাবার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে এবং একপর্যায়ে তিনি ইন্তেকাল করেন। এ সময় নবীজি সা. বলতে পারতেন, আচ্ছা ঠিক আছে। যেহেতু নতুন একটি সমস্যা সামনে এসেছে। তাই এখন তুমি নীচে নেমে পিতার মুখ দেখতে পারো। কিন্তু নবীজি সা. এমনটি করেন নি। বরং তিনি বললেন, না! যেহেতু তোমার স্বামী নিচে নামতে নিষেধ করেছেন, তাই নিচে নামতে পারবে না। তাঁর পিতাকে গোসল দেওয়া হল। কাফন পরিয়ে তার জানাযার খাটিয়া ঘর থেকে বের করা হল। তবু পিতাকে সে শেষ বারের মতো দেখার অনুমতি পায় নি। একটু ভাবুন, এটা তার জন্য কতটা কঠিন ছিল! কিন্তু তিনি তো একজন সাহাবীয়া। নবীজির কথার উপর আমল করেছেন। স্বামীর কথা রেখেছেন। হাদীছে বর্ণিত আছে, নবীজি সা. জানাযার পর যখন ফিরে এলেন, তখন ঐ মহিলার কাছে সংবাদ পাঠালেন, তুমি যেহেতু তোমার স্বামীর কথা রেখেছ তাই প্রতিদান স্বরূপ আল্লাহ তায়ালা তোমার পিতার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তাকে জান্নাত দিয়েছেন। [ইত্তেহাফুল-খাইর আল-বুসিরি, হাদিস: ৩২০৬,
আজ-মু’জামুল আউসাত লিত্ তাবরানী, হাদিস: ২৬৬]
একবার ভাবুন, শরীয়তের দৃষ্টিতে স্বামীর কথার কতটা গুরুত্ব রয়েছে।
স্বামীরা স্ত্রীদের কাছে কী চায়?
একটি গবেষণা
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারশত পুরুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনি আপনার স্ত্রী থেকে কী পেতে চান? তারা বলেছিল, আমরা যে কোন কষ্ট সহ্য করতে পারি। কিন্তু আমরা চাই, স্ত্রীরা আমাদের সম্মান করুক। স্ত্রী যদি স্বামীকে সম্মান না করে তাহলে আপনা থেকেই সম্পর্ক সিথিল হয়ে পড়ে।
২০১৪ সালে বইতে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছিল। বইটি বিশ্বে এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিলো যে, বইটিকে Book of the year
পুরস্কার দেওয়া হয়। এই বইয়ে উল্লেখ আছে যে, স্ত্রী যদি চায় তার ঘর শান্তিময় হোক। তাহলে তার উচিত স্বামীকে সম্মান করা।
স্ত্রীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
১. Let your husband be children's father
অর্থাৎ স্বামীকে সন্তানের বাবা হতে দিন। এক্ষেত্রে যেটা হয়, মা নিজে বাচ্চাদের মারধর করে, কিছুই হয় না। স্বামী একটু উচ্চ আওয়াজে বাচ্চাকে ডাকলে সে বিরক্ত হয়। তর্ক জুড়ে দেয়। বলে, সে এখনো ছোট, সন্তানের প্রতি দেখছি তোমার কোন দয়া-মায়া নেই! স্ত্রীর বোঝা উচিত, বাচ্চাদের শাসন করা, তিরস্কার করা, এগুলো জীবনের একটি অংশ।
২. Discuss with him how to raise children
স্বামীর সাথে আলোচনা করুন, বাচ্চাদের কিভাবে বড় করা যায়। অর্থাৎ বাচ্চাদের কিভাবে তরবিয়্যত দেওয়া যায়? আমাদের কোন কোন বিষয়গুলোতে যত্নশীল হওয়া উচিৎ? স্বামীর সাথে আলোচনা করুন। যাতে শিশুরা সুশিক্ষিত হতে পারে।
৩. Let your husband value your problem.
আপনার সমস্যাগুলো নিয়ে স্বামীকে মূল্যায়ন করার সুযোগ দিন। স্বামীর সাথে কোনো মতবিরোধ দেখা দিলে,
Try to understand the view point of your Husband
"স্বামীর দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করুন।"
অনেক সময় স্ত্রীরা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তারা স্বামীর দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করেন না। নিজে যেটা বলছে সেটার উপরই জমে থাকে।
৪. Be open minded in an argument
কোন বিষয়ে বিতর্ক থাকলে, তা খোলাখুলি প্রকাশ করুন।
৫. Bring up issues at right time
"উপযুক্ত সময় সমস্যা পেশ করুন।" যদি কোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে হয় তবে তা সঠিক সময়ে আলোচনা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে নারীরা ভুল করে থাকে। অনেক সময় তারা বাচ্চাদের সামনে তার সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করেন। যখন স্বামী খুব ক্লান্ত বা কোন কাজে ব্যস্ত তখন সমস্য পেশ করার জন্য উপযুক্ত সময় নয়। যখন স্বামী পাশে বসবে, আরাম করবে এবং সন্তানরা না থাকবে, তখন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন।
৬.Have realistic expectations
"বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা।"
অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী একজন অপরজনের কাছ থেকে বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা করা উচিৎ।
Do not develop negative feelings
নেতিবাচক অনুভূতি প্রকাশ করবেন না।
৭. Learn to say sorry if you are wrong
ভুল হলে দুঃখিত বলতে শিখুন। অর্থাৎ কথা বলার সময় কোন ভুল হলে বা স্বামীর সাথে নিজের ভুলের ব্যাপারে অহংকার প্রকাশ করে ফেললে, ক্ষমা চাওয়া উচিত। বলবে, আমি রাগের মাথায় একথা বলে ফেলেছি, প্লীজ আমাকে মাফ করে দিন।
৮. Roll with the changes
দাম্পত্য জীবনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এই পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজের মধ্যেও পরিবর্তন আনা জরুরি। যেমন– বিয়ের সময় একজন নারীর অবস্থা এক রকম থাকে। শিশুর জন্মের পর তার অবস্থা ভিন্ন রকম হয়ে যায়। এসবের সাথে নিজেকে বানিয়ে নিতে হবে।
৯. Take care of your self
অর্থাৎ নারীকে নিজের যত্ন নিতে হবে। অনেক নারী আছে যারা সন্তান ধারণ করার পর নিজেদের যত্ন নেওয়া একদম ছেড়ে দেয়। শরীর চর্চা করে না। পোশাকের যত্ন নেয় না। এটি তাদের একটি ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়। তারা বলে, আমি একজন স্ত্রী ঠিক আছে। কিন্তু আমি তো সন্তানের একজন মা এবং একজন গৃহিণীও! ধরে নিচ্ছি আপনি এসব কিছু। কিন্তু স্বামীর দৃষ্টিতে ভালো থাকা, সুন্দর ও পরিপাটি থাকা, স্ত্রীর কর্তব্য। শরীয়ত এটাকে সমর্থন করে। তাই নারীরা নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবে। পোশাক, গয়না এবং পারফিউম ইত্যাদি ব্যবহার করবে। স্বামীর উচিৎ, স্ত্রীকে জিনিসগুলো কিনে দেওয়া।
১০. Be your husband's friend
"স্বামীর সেরা বন্ধু হয়ে থাকুন।"
স্বামীর সাথে এমন মধুর সম্পর্ক গড়ে তুলুন যেন স্বামীর কিছু বলার থাকলে প্রথমে আপনাকেই বলে। এটা তখনই সম্ভব যখন একজন নারী তার স্বামীর Difficult time কঠিন সময়ে সহযোগী হবে। তার ভাল কাজগুলো সমর্থন করবে।
বেশিরভাগ নারীর অভিযোগ, স্বামীরা তাদের প্রতি মনোযোগ দেয় না। ঘরের পেরেশানীও দূর হয় না। নিজেকে একবার প্রশ্ন করুন, আপনি কি তার সেরা বন্ধু? তাহলে আপনার মনই সাক্ষ্য দিবে যে, আপনি তার সেরা বন্ধু নাকি শত্রু হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন?
সুখী স্ত্রীর ১২টি রহস্য
Twelve secrets of happily married woman
১. প্রতিদিন আধা ঘন্টা ব্যায়াম করা
আমেরিকান একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ বছরের গবেষণা: সুখী দাম্পত্য জীবনযাপনকারী একজন মহিলার প্রতিদিন আধা ঘন্টা ব্যায়াম করা উচিত, যাতে সে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকে এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন।
২. সুষম খাদ্য গ্রহণ
সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে দেহের পুষ্টি ধরে রাখবে, যাতে দেহে শক্তি থাকে। কিছু মেয়ে স্মার্ট হওয়ার জন্য শখের বশে এত বেশি ডায়েট করে যে, তাদের পক্ষে বসা থেকে উঠে দাঁড়ানোও কঠিন হয়ে পড়ে। আবার বলে, বসা থেকে দাঁড়ালে আমার মাথা ঘুরায়।
৩. চেহারার যত্ন নিন
Take care of your appearance
"চেহারার যত্ন নিন।" তবে এতে একটা বাজেট থাকা উচিত। এমন নয় যে, স্বামীর পুরো বেতন উড়িয়ে দিবেন। একজন নারী দিনে অন্তত একবার গোসল করবে। পোশাক পরিবর্তন করবে। যাতে শরীর পরিষ্কার থাকে।
৪. Nurture intellect
মেধাকে সতেজ রাখতে মেধার খোরাক দিবে। যাতে মস্তিষ্ক ঠিকভাবে কাজ করে।
Be soft and compassionate.
অর্থাৎ, স্বামীর সাথে কোমল স্বভাব এবং প্রেম ভালবাসা নিয়ে থাকবে।
৫. ভাব ও ভালোবাসা
স্বামীর সাথে এমন ভাব ও ভালোবাসা নিয়ে থাকবে যেন তার এই মনোভাবের কারণে স্বামী হৃদয়ের সব কথা তার সামনে উন্মুক্ত করে দেয়।
Your attitude should welcome husband to open up
অর্থাৎ আপনার মনোভাব যেন এমন সহানুভূতিশীল, প্রেমময় ও আবেদনময় হয় যে, স্বামী হৃদয় নিংড়িয়ে আপনার সামনে সব কিছু উন্মুক্ত করে দেয়।
৬. Encourage your husband to spend time with male friends
অর্থাৎ স্বামীকে বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর জন্য উৎসাহিত করুন। স্বামী যেন তাবলীগে সময় দেয়। উলামা মাশায়েখদের মজলিসে বসে। কুরআন ও হাদীস দরসে অংশগ্রহণ করে। কিছু পুরুষ আছে যারা ঘড়ে শুয়ে-বসে সময় কাটাতে থাকে। এটি ভালো অভ্যাস নয়। এটি একজন ব্যক্তির জীবনকে নষ্ট করে দিতে পারে। তাই স্ত্রীর উচিত তার স্বামীকে বিভিন্ন সভায় যেতে উৎসাহিত করা। যাতে সে সভা থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ পায়। কিছু নারী তাদের স্বামীদের ঘর থেকে বেরই হতে দেয় না, এটি খুব খারাপ কথা।
৭.Greet your husband with smile, hug and eye contact every day.
তারপর যখন স্বামী বাইরে থেকে বাড়িতে আসে তখন "Greet your husband with smile, hug and eye contact every day. "স্বামীকে প্রতিদিন একটি হাসি, আলিঙ্গন এবং চোখে চোখ রেখে শুভেচ্ছা জানান।"
আপনি যদি বাড়িতে কোনো কাজে ব্যস্ত থাকেন, Drop everything and provide your husband a Warm welcome "সবকিছু ছেড়ে দিন, আগে স্বামীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।"
৮.Sense of humor
Sense of humor একজন নারীর মধ্যে হাস্যরসের অনুভূতি থাকা দরকার। অর্থাৎ তার এমন কিছু বলা উচিত যাতে হাস্যরস থাকে। যার দ্বারা হৃদয় একে অপরকে কাছে টানে। যখন স্বামী-স্ত্রী একসাথে বসে হাসে এবং কথা বলে, তখন তাদের হৃদয় একে অপরের সাথে আরও ঘনিষ্ঠ হয়।
৯.স্বামীর প্রয়োজন বুঝা
স্ত্রীর দায়িত্ব তার স্বামীর প্রয়োজন অনুধাবন করা। তার কোন কিছুর প্রয়োজন আছে কিনা? পূর্ব থেকেই ব্যবস্থা করে রাখবে। যাতে প্রয়োজন মুহূর্তে কোনো সমস্যা না হয়। জীবন প্রাণবন্ত এবং রাসালো হওয়া চাই। আনন্দে ভরা জীবন বিয়ের জন্য ভিটামিনের মতো।
১০.নিজেকে একজন সেবিকা ভাবুন
একজন নারী সবসময় নিজেকে সেবিকা মনে করবে। সেবা করার মনোভাব রাখবে। অর্থাৎ, মনের মধ্যে এটা রাখবে, আল্লাহ তায়ালা আমাকে সেবার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আমি যদি কুমারী হই, তাহলে আমি আমার বাবা ও ভাইয়ের সেবা করব। বিবাহিতা হলে আমাকে স্বামীর সেবা করতে হবে। আর যদি স্বামী মারা যায়, তাহলে আমার সন্তানদের সেবা করতে হবে। মনে করুন আল্লাহ আমাকে সেবার জন্য সৃষ্টি করেছেন, তাই সেবা করাই আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
১১. Don't be controlling
ঘরের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেওয়ার চেষ্টা করবে না। নারীরা যখন বাড়ির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেওয়ার চেষ্টা করে, তখন ঘরে সমস্যা সৃষ্টি হয়। অনেক স্থানে দেখা যায়, স্বামী কথা বলার সুযোগই পান না। যদি কোনও সময়ে স্বামী লোকদের সাথে কথা বলেন, তখন She gives disappointing looks স্ত্রীর চেহারায় হতাশার ভাব ফুটে ওঠে। যেন সে অপছন্দ করছে।
১২. They give countless unwanted suggestion
They give countless unwanted suggestion কিছু নারী আছে যারা অগণিত অবাঞ্ছিত পরামর্শ দেয়। তারা উপদেশ দিতে পছন্দ করে। তারা একটি বা দুটি পরামর্শ দেয় না, বরং Countless unwanted suggestion তারা অসংখ্য অবাঞ্ছিত পরামর্শ দিতে থাকে।
স্বামী যখন বাজার করে আনে তখন এত দোষ বের করে যে, স্বামী বেচারার দ্বিতীয়বার আর যাওয়ার ইচ্ছে হয় না।
একইভাবে, ড্রাইভিং করার সময় স্ত্রী পাশে বসে বলে, তুমি এখানে ব্রেক করো নি। এটা করো নি। ওটা করো নি! আশ্চর্য, সে যদি নিরাপদে গাড়ি চালায়, তাহলে তাকে চালাতে দিন! কিন্তু যেটা হয়, স্বামী গাড়ি চালাচ্ছেন আর স্ত্রী বসে বসে স্বামী চালাচ্ছেন!
কিছু নারী সবকিছুতেই হস্তক্ষেপ করে এবং পরামর্শ দেয়। এটি একটি রোগ। যার নাম, Help syndrome.(হেল্প সিনড্রোম) এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।
অনেক নারী তাদের স্বামীর সাথে বড় সন্তানের মতো আচরণ করে। এ রোগের নাম; Mother complex.
স্ত্রীদের জন্য উম্মাহাতুল মুমিনীনের জীবন অনুসরণীয়
নারীরা যদি সেরা স্ত্রী হতে চায় তাহলে তাদের অবশ্যই খাদিজাতুল কুবরার রাযি.-এর জীবনী অধ্যয়ন করা উচিৎ।
দেখুন, কিভাবে তিনি নবীজি সা.-এর সাথে জীবনযাপন করেছিলেন। তিনি খুব ধনী ছিলেন এবং সমাজে তার অনেক সম্মান ছিল। কিন্তু যখন বিয়ে করেন তখন তিনি তার সমস্ত সম্পদ নবীজি সা.-এর জন্য উৎসর্গ করে দেন। নবীজির খেদমতে নিজের গোলামকেও পেশ করেন। তিনি কত বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন? এর দ্বারা বুঝা যায়, তিনি স্বামীকে কতটা ভালবাসতেন। পুরো বিশ্ব যখন নবীজি সা.-এর বিরোধিতা করছিল তখন তিনিই নারীদের মধ্যে সর্বপ্রথম কালিমা পাঠ করেন। নবীজীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন। কঠিন মুহূর্তে নবীজীর পাশে থাকেন। তাঁকে সমর্থন করেন। নবীজী সা.-এর কাছে প্রথম যখন ওহী নাযিল হয়, তখন তিনি প্রচণ্ড আতঙ্কিত অবস্থায় ঘরে ফিরলেন। ঘরে ফিরে বললেন, زَمِّلُونِي زَمِّلُونِي আমাকে কম্বল দাও, আমাকে কম্বল দাও। হযরত খাদিজা রাযি. জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে? নবীজী সা.বললেন, আমি আমার প্রাণের আশঙ্কা করছি। একথা শুনে সাইয়্যেদা হযরত খাদিজাতুল কুবরা রাযি. উত্তর দিলেন,
كَلَّا وَاللَّهِ ! مَا يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ وَتَحْمِلُ الْكَلَّ وَتَكْسِبُ الْمَعْدُومَ وَتَقْرِي الضَّيْفَ وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ
কিছুতেই নয়, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আপনাকে অপমানিত করবেন না। কারণ, আপনি আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলেন। দুর্বলদের বোঝা বহন করেন। গরীবদের জন্য উপার্জন করেন। মেহমানদের মেহমানদারি করেন। সত্যের পথে কষ্ট স্বীকার করেন।
একজন স্ত্রীর মধ্যে কতটা আত্মবিশ্বাস! তিনি বলছেন, আল্লাহ আপনাকে ধ্বংস করবেন, এটা হতেই পারে না! এখানেই শেষ নয় বরং পরের দিন তিনি তার চাচাতো ভাই ওরাকা বিন নাওফালের কাছে নিয়ে যান। যিনি আহলে কিতাবীদের মধ্যে একজন বড় আলেম ছিলেন। তখন তিনি অনেক বৃদ্ধ এবং দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাকে বললেন, আপনি তাঁর ঘটনা শুনুন সে কী বলছে। অতঃপর নবীজী সা. যখন পুরো ঘটনা তাকে বর্ণনা করলেন। তখন তিনি নিশ্চিত হলেন যে, এটি সেই সম্মান যা আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা আ. কে দান করেছিলেন। হায়! আমি যদি যুবক হতাম! আমি যদি তখন যুবক থাকতাম যখন তোমার লোকেরা তোমাকে তাড়িয়ে দিবে! নবীজী সা. অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, তারা কি আমাকে বহিষ্কার করবে?! ওরাকা উত্তর দিলেন, হ্যাঁ! আপনি যা কিছু নিয়ে এসেছেন যে ব্যক্তিই তা নিয়ে এসেছেন, সেই বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছে। যদি আমি আপনার যামানা পাই তাহল আপনাকে আমি পূর্ণ সহযোগিতা করব। ওরাকা কিছুদিন পর মারা যান।
এদিকে ওহির আগমন কয়েক দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। [সহীহ বুখারী, হাদিস-৩]
ওরাকার সাথে কথা বলে নবীজী সা. অত্যন্ত প্রশান্তি লাভ করেন। ভালো স্ত্রীরা এমনই হয় তারা নিজেরাও নৈতিক সমর্থন দেয়। তারপর দেখে কার কাছে গেলে আমার স্বামীর মন শান্তি পাবে, তার কাছে নিয়ে যায়। হযরত খাদিজা রাযি. পদে পদে আল্লাহর প্রিয় হাবীবকে সমর্থন করেছেন। যার ফলে খাদিজাতুল কুবরা রাযি.-এর প্রতি নবীজী সা.-এর ভালোবাসা এটতাই গভীরে ছিলো যে, একবার তাঁর বোন আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাযি. -এর সাথে সাক্ষাৎ করতে মদীনায় এলেন। তাঁর বোনের আওয়াজ শুনে খাদিজাতুল কুবরা রাযি. -এর কথা স্মরণ হল। নবীজী সা. বললেন, এটা কার আওয়াজ? খাদিজার কণ্ঠের সাথে তার অনেক মিল! বলা হল, হযরত খাদিজা রা.-এর বোন।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) বলেন, আমার অন্তরে তখন এক অদ্ভুত অবস্থা সৃষ্টি হল। মৃত্যুর এতদিন পরও আল্লাহ নবী সা. তাকে স্মরণ করছেন?! তাই আমি বলে ফেললাম, হে আল্লাহর হাবীব! আপনার অল্পবয়সী সুন্দরী স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আপনি এই বুড়ির কথা স্মরণ করছেন? [সহীহ বুখারী, হাদিস: ৩৮২০]
এক হাদীসে নবীজি সা. বলেন,
إِنِّي قَدْ رُزِقْتُ حُبَّهَا
“আল্লাহ তায়ালা আমার হৃদয়ে তাঁর ভালবাসা ঢেলে দিয়েছেন’’ (তাই মৃত্যুর এতদিন পরেও তাঁকে স্মরণ করছি)। [সহীহ মুসলিম, হাদিস:২৪৩৫]
আজ যে নারীরা বলে, আমাদের স্বামীরা আমাদের প্রতি মনোযোগ দেয় না। আমাদের সাথে ভালবাসা নিয়ে কথা বলে না। তাদের চিন্তা করা উচিত তারা ঘরটিকে কেমন বানিয়ে রেখেছে। ঘরটি একটি যুদ্ধক্ষেত্র নয় তো?
নিজের সমস্যাগুলো প্রেম-ভালোবাসা এবং স্নেহের সাথে সমাধান করবে। ইতিবাচক মনোভাব রাখবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতিটি ঘরে দম্পতিকে সুখী জীবন দান করুন। সকলের দুশ্চিন্তা দূর করুন, আমীন।
সায়্যেদা হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা.-এর জীবনী পড়লেও আপনি জানতে পারবেন, তিনি তার স্বামী (নবীজী সা.) কে কতটা ভালোবাসতেন এবং সমর্থন করতেন। আয়েশা রা. ভালো করেই জানতেন কিভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে হয়। তিনি খুব মিষ্টি কথায় নবীজী সা. এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতেন। তাঁর প্রসিদ্ধ কবিতা রয়েছে, যার অর্থ– “হে আকাশ! তোমার একটি সূর্য আছে আর আমারও একটি সূর্য আছে। তবে পার্থক্য হল এই, তোমার সূর্য সকালে উদিত হয় আর আমার সূর্য এশার পর উদিত হয়। হে আকাশ! তোমার সূর্যের আলো একদিন ম্লান হয়ে যাবে, কিন্তু আমার সূর্যকে আল্লাহ তায়ালা যে আলো দান করেছেন, তা কখনো ম্লান হবে না। আজকের যুগে এমন কোন স্ত্রী আছে? যে তার স্বামীর প্রতি এভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করে? স্বামী যত ভালো হয়েই থাকার চেষ্টা করুক না কেন, সে কোন না কোন ইস্যু বের করে তার সমস্ত ভালো ধুলিস্যাৎ করে দিবে। তাকে পৃথিবীর সবচে’ খারাপ স্বামী হিসেবে প্রমাণ করবে। এমনটি করা স্ত্রীদের জন্য আদৌ উচিৎ নয়।
সায়্যেদা হযরত আয়েশা রাযি. এবং সায়্যেদা হযরত খাদিজাতুল রাযি.-এর জীবনী আমাদের জন্য অনুকরণীয়। যদি একজন নারী সেরা স্ত্রী হয়ে থাকতে চায়, তাহলে তাকে উম্মাহাতুল মুমিনীনদের জীবনী পড়ে সে অনুযায়ী স্বামীর সাথে জীবন কাটানো উচিৎ।
☆ স্বামীর প্রতি ফাতেমা বিনতে আবদুল মালিকের আনুগত্য
ফাতিমা বিনতে আবদুল মালিক ছিলেন, হযরত উমর বিন আবদুল আজীজ রহ.-এর স্ত্রী। তার পিতা ও পিতামহ বাদশাহ ছিলেন। তার ভাইও বাদশাহ ছিলেন। তার স্বামীও বাদশাহ। তিনি এমন একজন নারী যার পরিবারে এতজন বাদশাহ ছিল। প্রকৃত অর্থেই তিনি একজন রাজকন্যা ছিলেন। তবু তিনি উমর বিন আব্দুল আজিজের এতটা সহযোগি ছিলেন, যা পড়ে অবাক হতে হয়। একজন স্ত্রী তার স্বামীর জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করতে পারে? হজরত উমর বিন আবদুল আজিজ রহ. যখন খলিফা হলেন, তিনি প্রথমে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বললেন। বললেন, দেখো! তোমার কাছে অনেক স্বর্ণ অলঙ্কার আছে। আর এ সব তোমাকে দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। আমার মতে এটা ঠিক নয়। এগুলো বাইতুল মালের সম্পদ। তোমার সামনে এখন দুটি পথ খোলা আছে। একটি হল: তুমি যদি এই অলঙ্কারগুলো রাখতে চাও তাহলে আমার থেকে আলাদা হয়ে যাও এবং নিজের মত জীবন যাপন করো। অপরটি হল: এই অলঙ্কারগুলো বাইতুল মালে ফিরিয়ে দাও এবং আমার স্ত্রী হয়ে জীবনযাপন করো। তখন ফাতিমা বললেন, এই অলঙ্কারগুলো আমার কাছে তেমন কিছুই না! এর চেয়ে বেশি কিছু হলেও দিতে প্রস্তুত তবু আপনার সঙ্গ ত্যাগ করতে প্রস্তুত নই! এমন একজন নারী যে এতো এতো আদর আহ্লাদে প্রতিপালিত হয়েছে সে নিজের সম্পদ এভাবে পদতলে রেখে স্বামী সাথে থাকাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। নিশ্চয়ই সে একজন আনুগত্যশীল এবং আদর্শ স্ত্রী। আল্লহ তায়ালা সকল স্ত্রীকে আদর্শ স্ত্রী হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।
হ্যাশ ট্যাগ:
- আদর্শ স্ত্রী (Ideal wife)
- নারী জীবনের পাথেয়।
- নারীর অধিকার আদর্শ বধূ
- ইসলামে আদর্শ নারী,
- ইসলামী জীবন,
- ইসলামের দৃষ্টিতে নারী,
- জাহেলী যুগে নারী
- ভালো স্ত্রীদের যেসব গুণ থাকে
- ⇰ মূল: হযরত মাওলানা জুলফিকার নকশবন্দী দা.বা.
- ⇰ ভাষান্তর: সাখাওয়াতুল্লাহ
0 Comments